ডায়াবেটিস কোন একক কারণে পর্বতে পরিণত হয় না।
অনেকগুলো শিলা ও আঁকাবাঁকা রাস্তার চড়াই উৎরাই নিয়ে তৈরি হয়।
প্রথমত: অনবরত স্ট্রেস যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় লেভেলের বিভিন্ন অস্থিরতা থেকে আসে। প্রচন্ড গতিশীল সভ্যতার পায়ে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, হিংসা, অহংকার, কূমন্ত্রনা,ক্ষোভ, হতাশা, কৃপনতা প্রভৃতি থেকে মনের উপর ভর করে বসে ” স্ট্রেস” ।
দ্বিতীয়ত: অতিরিক্ত ফসলের লোভে GMO বীজ ও তা থেকে উদ্গত গাছের বাঁচার লড়াই এ অত্যাবশ্যকীয় Pesticides, Fungicides, Herbicides, inorganic fertilizers এর বহুল ব্যবহার। যেগুলো Quantity দিয়ে Quality কেড়ে নিয়েছে। লিভার ঐসব জেনোবায়োটিক মেটাবলিজমের কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে নিজের কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। গ্লাইকোজেন ষ্টোরেজ করার সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
তৃতীয়ত: ক্রনিক স্ট্রেস থেকে অনবরত প্রবাহিত এড্রিনালিন সকল অঙ্গের থেকে নিরিহ ও সিক্রেটরি ক্লোনড বিটা কোষগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে। ছোট্ট ছোট্ট ক্ষত দীর্ঘদিন পর বৃহত্তর ক্ষত করে ইনসুলিনের পরিমাণ মত সিক্রেশনের ক্ষমতা হারিয়েছে।
চতুর্থত: এপিনেফ্রিন বেশি, ইনসুলিন কম, গ্লুকাগন বেশি এমন অবস্থায় কোষের মধ্যে সন্চিত ফ্যাট ( TAG, CE) ভেঙে ভেঙে ( Lypolysis) ফ্যাটি এসিড তৈরি করেছে। এদিকে লিভার VLDL তৈরী করার প্রবণতা কমিয়েছে। HDL এর তৈরি আরো কমে গিয়ে ভেঙে যাওয়া ফ্যাটি এসিড কে বা কোলেস্টেরল কে কোষের জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে ও লিভারে পৌঁছে দিতে পারার ক্ষমতা হারিয়েছে। কোষের চারপাশে, ধমনী ক্যাপিলারির গায়ে কোলেস্টেরল,ফ্যাটি এসিড জমতে শুরু করেছে। ইনসুলিন হাইড্রোফিলিক, লিপোফোবিক প্রোটিন বিধায় কোষের মেমব্রেনে সিগন্যাল পাঠাতে ব্যার্থ্য হয়েছে। ফলত: কোষে গ্লুকোজ প্রবেশের দরজা (GLUT4) যথাযথ পরিমাণ ও সংখায় খুলতে পারেনি। কোষ গ্লুকোজের সাগরে থাকলেও নিজে অভুক্ত থেকে অশান্ত হয়ে পড়েছে। রক্ত গ্লুকোজ ইমব্যালান্স তৈরি হয়েছে।
রক্তের ওসমোলালিটি বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন অর্গানে রক্তের পারফিউশন কমেছে। বিভিন্ন অঙ্গের জন্য হানিকর হয়ে উঠেছে।
এইসব ক্রমকান্ডের ধারা যখন লাগু হয়ে যায়, তখন ডায়াবেটিস নামক প্যানিক রোগটি দেহের ভিতর থেকে বাহির লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
প্রত্যেক অপ্রত্যাশিত অঘটনগুলোর যথাযথ হলিষ্টিক এপ্রোচে ব্যবস্থাপণা নিয়ে, আত্মবিশ্বাস ও পরম যত্ন নিয়ে এই ডায়াবেটিসের পর্বতকে আমরা জয়া করতে পারি।
ডায়াবেটিস কম বা বেশি হওয়ার সাথে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নামক ব্যাপারটার খুব একটা সম্পর্ক নেই। কোন খাবার নির্দিষ্ট পরিমাণ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের পরে রক্তে কতটুকু গ্লুকোজ বাড়ছে – সেটাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। সোজা কথা যে খাদ্যে যত বেশি গ্লুকোজ থাকবে বা মনোস্যাকারাইড থাকবে এবং সহজে পেটের মধ্যে বিপাকজাত হবে,তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হবে।
কিন্তু, একটা সময় গিয়ে সব খাবারই পাচিত হয়ে রক্তে গ্লুকোজ বাড়াবে। কারো সময় কম লাগে, কারো বেশি।
কিন্তু, রক্তের গ্লুকোজ ইমব্যালান্স হওয়ার শুধুমাত্র ইনসুলিন কারণ নয়; ক্রনিক স্ট্রেস থেকে এড্রিনালিন, গ্লাইকোজেন ষ্টোরেজ থেকে লিভার, চর্বি থেকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সি, শরীরের প্রয়োজনের বাইরে খাদ্যথলির ১/৩ ভাগের বেশি উদরপূর্তি ভক্ষণের নিয়মিত অসচেতন অভ্যাস।
ঐ ৪ টে বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য নির্বাচন ও কাজকর্ম দৈনিক জীবনের পরতে পরতে অনুশীলন করতে পারলে, ইনশাআল্লাহ রক্তের গ্লুকোজ ইমব্যালান্স তার আগের ব্যালান্স অবস্থা ফিরে পাবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে-
রক্তের চর্বি কমানো, স্ট্রেস কমানো, লিভারের জেনোবায়োটিক মেটাবলিজমের CytP450 system কে সক্রিয় করা ভীষণ জরুরী।
এই কাজ গুলো করতে সহায়ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে -” এক্সারসাইজ” ।