দৈনিক নিয়মিত হাল্কা বা মাঝারি স্ট্রেনের এক্সারসাইজ ( ভারি এক্সারসাইজ নয় কিন্তু) যে সকল মলিকুলার ও বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন করে তা হল-
১) সর্বাঙ্গের কাজ বেড়ে যায় বলে কোষের শক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনীতা বেড়ে যায়।
২) কোষের মধ্যে মাইটোকন্ড্রিয়াল বায়োজেনেসিস বৃদ্ধি পায়।
৩) সুপ্রা রেনাল গ্লান্ড থেকে এড্রিনালিন বেশি ক্ষরিত হয়ে রক্ত, কোষ,প্যাংক্রিয়াস প্রভৃতি সর্বাঙ্গে পৌঁছায়।
৪) এড্রিনালিন হরমোন প্যাংকরিয়াসকে ইনসুলিন সিক্রেশন করতে উত্তেজিত করে তোলে। গ্লুকাগোন কমিয়ে আনে।
৫) কিন্তু ডায়াবেটিসে রোগীর প্যাংক্রিয়াস ১০০% সক্ষম ও সতেজ না থাকায় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি হয়ে রক্তে আসতে পারেনা। কিন্তু গ্লুকাগোন তুলনায় বেশি তৈরী হতে শুরু করে যখন ব্রেনের হাইপোথ্যালামাস এর ব্লাড গ্লুকোজ রেগুলেটরি সেন্টার কোষের মধ্যে গ্লুকোজের অভাব অনুভব করে।
৬) ফলত: লিভারের মধ্যে জমে থাকা গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে। এক্ষেত্রে , এড্রিনালিন ও গ্লুকাগোন দুজনেই দুইভাবে একই কাজ করে। Beta adrenergic receptor stimulation করে glycogen ভেঙে গ্লুকোজ করে এড্রিনালিন এবং গ্লুকাগন Adenylate cyclase stimulate করে কোষের মধ্যে cAMP বৃদ্ধি করে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে ( Glycogenolysis) । গ্লুকাগোন শুধুমাত্র লিভারের উপর কাজ করে glycogen ভাঙতে পারে এবং protein ( amino acids, fatty acids থেকে নতুন গ্লুকোজ তৈরি করে Gluconeogenesis)এবং সেটা শুধু মাত্র লিভারেই। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের লিভারের গ্লাইকোজেন সন্চয় খুবই কম।
তাই এছাড়াও,
৭) এড্রিনালিন ও গ্লুকাগোন এডিপোজ টিস্যুতে জমে থাকা স্টোর ফ্যাট TAG,CE কে নেক্সট টার্গেট করে দেহের শক্তি উৎপাদন কারী কাঁচামাল গ্লুকোজ বা এসিটাইল কো এ তৈরীর জন্য।
৮) এড্রিনালিন ও (ইনসুলিন :গ্লুকাগোন<.৬) এডিপোজ টিস্যুতে বা ভাসকুলার এন্ডোথেলিয়াল লেয়ারে থাকা এনজাইম LPL কে উত্তেজিত করে তোলে। সক্রিয় LPL তখন কোষের চারিপাশের, ম্যাট্রিক্সের, এন্ডোথেলিয়াল লেয়ারের, এডিপোজ কোষের ভিতরের ফ্ল্যাট কে ভেঙে ভেঙে ফ্যাটি এসিড, ফ্রি কোলেস্টেরল, গ্লিসেরল তৈরি করে।একে লাইপোলাইসিস বলে।
৯) কোষের মধ্যে প্রয়োজন টুকু রেখে বাকি ফ্যাটি এসিড গুলো তুলে নিয়ে দেহের (লিভার, মাসল)সকল কোষে ( ব্রেন ও লোহিত রক্ত কণিকা বাদ দিয়ে) বহন করে নিয়ে যায় HDL. কারণ, HDL এর LCAT( Lecithin: Cholesterol acyl transferase) থাকে। ফলে বেশি বেশি পরিমাণে ইন্টেষ্টিন ও লিভারের কোষের মধ্যে HDL তৈরী হতে থাকে।
১০) এই ফ্যাটি এসিড মাসল টিস্যুতে পৌঁছায় HDL ও Albumin এর সাহায্যে। ওখানে ফ্যাটি এসিড কোষের মধ্যে ঢুকে; সাইটোপ্লাজম থেকে কারনিটিনের সাহায্যে মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে ঢুকে। এই ঘটনা ( শুধু মাত্র ৮-১২ কার্বন) ছোট ও মাঝারি ধরণের ফ্যাটি এসিডের জন্য। লম্বা হলে (>১৬কার্বন) আরেকটা অতিরিক্ত জায়গা
পারক্সিজমে যেতে হয় আরো ছোট হবার জন্য।
১১) এরপর ফ্যাটি এসিড থেকে এসিটাইল কো এ এবং শক্তি উৎপন্ন হয় ক্রেবস সাইকেলে। এটা ঘটে ব্রেন ও RBC ছাড়া দেহের সব কোষে।
১২) ফ্রি কোলেস্টেরল কে HDL তুলে নিয়ে গিয়ে লিভারে ফেলে। লিভার এই কোলেস্টেরল ও নিজের মধ্যে ফ্যাটি এসিড থেকে তৈরি করা কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি এসিড কে Glycerol এর সাথে esterification করে, অতঃপর VLDL এ প্যাক করে রক্তে পাঠায় । কোলেস্টেরল সিনথেসিস লিভারের মধ্যে বেড়ে যায় বিধায় লিভারের জমে থাকা চর্বি TAG ভেঙে ফ্যাটি এসিড তৈরি হয়। এই ফ্যাটি এসিড থেকে এসিটাইল কো এ এবং সেখান থেকে বহু শক্তি ও স্টেপের
পথ খরচ করে কোলেস্টেরল তৈরী করে।
ফলে, এক্সারসাইজ করলে লিভারের মধ্যে বায়োকেমিক্যাল বহু প্রসেস অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়।
– গ্লাইকোজেন ভাঙছে
– প্রোটিন বা ফ্যাট থেকে নতুন গ্লুকোজ তৈরি করছে ( transamination, deamination).
– কোলেস্টেরল সিনথেসিস বাড়ছে
– ফ্যাটি এসিড এর বিটা অক্সিডেশন বাড়ছে
ফলে লিভারের অন্যান্য কাজগুলো স্তিমিত হবে। বাইল এসিড তৈরি খুবই কম হবে। তাই এক্সারসাইজ এর আগে ২-৩ ঘন্টা ও পরে ৩০-৬০ মিনিট পেটে কিছু দিলেই বদহজম হবে।
১৩) এডিপোজ কোষের মধ্যে তৈরি হওয়া fatty acid লিভারের মধ্যে আসার পর VLDL এগুলোকে সব কোষে নিয়ে যায় via IDL, LDL ।
১৪) এমাইনো এসিড ও ফ্যাটি এসিড, Lactate ছাড়াও, গ্লিসেরল নিওগ্লুকোজেনেসিস করে লিভারের মধ্যে গ্লুকোজ তৈরি করে। যা লোহিত রক্ত কণিকা ও কিছুটা ব্রেনের শক্তি উৎপাদন কারী কাঁচামাল হিসেবে সরবরাহ হয়।
১৫) অনেকটা এসিটাইল কো এ কিটোন বডি তৈরি করে যা রক্তের natural pH buffer বাইকার্বোনেটকে কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তের এসিডিটি বেড়ে গিয়ে এসিডোসিস ঘটে। যা প্রাণ ঘাতক অনেক সময়।
১৬) কিছু কিটোন বডি ( বিটাহাইড্রক্সি বিউটাইরিক এসিড) রক্তের মাধ্যমে ব্রেনে গিয়ে কিছুটা শক্তি উৎপাদন কারী কাঁচামাল হিসেবে কাজ করে।
১৭) এই এক্সারসাইজ অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ বেশি থাকলেও লিভারে ও ভূড়ি, পিঠে পেটে জমা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। রক্তে HDL বাড়বে,LDL অত না কমলেও LDL:HDL অনেক কমবে। ফলে, এথেরোস্ক্লেরোসিস কমবে। প্রেসার, হার্ট ডিসিস,ফ্যাটি লিভার,ভুড়ি, ওজন কমবে।
১৮) কোষের চারপাশে ও মেমব্রেনে কোলেস্টেরল,TAG কমবে। ফলে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়বে।
১৯) যেটুকু ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে ওগুলোর অধিকাংশ টাই এবার কোষের উপর কাজ করতে পারবে, যেটা এতদিন স্লো চলছিল। ইনসুলিনের কাজের গতি ও সেন্সিটিভিটি আসবে।
১৯) রক্তের গ্লুকোজ ফটাফট কোষে ঢুকতে শুরু করবে। কোষ তার মূল স্রোতে ফিরে এসে চনমনে হয়ে উঠবে।
২০) এড্রিনালিনের ভূমিকা শেষ হলেই দেহ থেকে বেরিয়ে পড়বে লিভার ও প্রস্রাবে মাধ্যমে।
২১) ফলে ইনসুলিন: গ্লুকাগোন বাড়তে থাকবে ধীরে ধীরে।
২২) শেষমেশ রক্তের গ্লুকোজ কমতে শুরু করবে। ডাডয়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এবার যদি রোজা থাকি, তবে সেইম বায়োকেমিক্যাল ঘটনা গুলো ঘটবে। এক্সট্রা যেটা হবে সেটা হল –
💯লিভার এর CYP P450 system সক্রিয় ও বেশি বেশি কাজ শুরু করে,
💯 ফ্যাটি এসিড লোড টু VLDL কমে যায়। VLDL কম তৈরি হয় . । কারণ ফাষ্টিং অবস্থায় লিভারের মধ্যে কোষের RER এ apolipoprotrin B100 সিনথেসিস একদম কমে যায়। অধিকাংশ ফ্যাটি এসিড গুলো কিটোজেনেসিস, গ্লুকোনিওজেনেসিস এ প্রবেশ করে বেঁচে থাকার জন্য।
💯আরো কম পরিমাণে শিরা ধমনীর গায়ে LDL যায়।
💯 আরো বেশি পরিমাণে HDL পেরিফেরাল কোষ থেকে চর্বি লিভারের মধ্যে নিয়ে এসে Fatty acid-acetyl coA- amino acid,KB তৈরি হয়।
💯প্যাংক্রিয়াস ও লিভারের ডাইজেশন কাজে বিরতি পায় এবং অন্যান্য কাজগুলো বেশি গতিতে করতে সক্ষম হয়।
তবে ১৮-২৪ ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকলে Acidemia হবে, ব্রেন সেল ডিহাইড্রেট হয়ে ব্রেনে জল কমে যাবে। ভিটামিনের অভাবে (B7) নিওগ্লুকোজেনেসিস বন্ধ হয়ে গেলে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়ে শেষমেশ ব্রেন ডেথ হতে পারে।
🤐এবার যদি, Non/Low carb ,fat protein rich diet খায়, তবে
Lipolysis, ketogenesis ছাড়াও transamination, deamination, urea formation বাড়বে। ইউরেমিয়া, হাইপার এমোনেমিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রেও , ব্রেন ও অন্যান্য কোষ মেটাবলিক জলের অভাবে ডিহাইড্রেশন হবে।
Dietary fats থেকে প্রাপ্ত Fatty acids, amino acids গুলো আগের কাজগুলো খুব ধীরে করে দিবে
লিভার প্রচুর bile juice, প্যাংক্রিয়াস lipase তৈরি করবে।
প্রচুর NADPH, ATP খরচ করে, এনজাইম খরচ করে neuglucogenesis, Cholesterol synthesis , HMP, Transamination, Deamination etc তৈরি হবে।
ফলে, লিভার,ব্রেন, লোহিত রক্ত কণিকা ও অন্যান্য কোষের উপর Metabolic stress তৈরি হবে।
দীর্ঘ দিনের এই রকম স্ট্রেস সেল সারভাইভাল কে চ্যালেন্জিং করে দেয়। তাই, সর্বোত্তম হল- খাদ্যে কার্বো ৫০-৭০%, প্রোটিন ১০-১৫%, ফ্যাট ১৫-৪০% ঠিক আছে। এরপর অবশ্যই, খাবার খাওয়ার সঠিক নিয়ম
-ক্ষিদে লাগিয়ে খেতে হবে
– ১/৩ ভাগ পেট ভরে খেতে হবে
-১/৩ ভাগ জল খেতে হবে।
সারমর্ম:
Regular and proper physical activities or exercises সুগার কমাতে সাহায্য করে।
তাই, ডায়াবেটিসকে দেহ থেকে তাড়াতে অল্প কিন্তু নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।