কেন আমি অসুস্থ?
রহিমার মনে চরম অস্হিরতা! বাড়ীর সকল কাজকর্ম সেরে নিজের পড়াশুনাটাও পুরোদমে করতে হয়৷ বি.এ ফার্ষ্টক্লাস এ উত্তীর্ণ হয়ে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছে৷ তিন বোন অর এক ভাই ; সঙ্গে বাবাকে মা — এই তাদের সংসার৷ মা গৃহকর্ত্রি আর বাবা হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক৷
রহিমা বরাবরই মেধাবী ও কৌতূহলী ৷ তাই, সবকিছুর সাধারন জ্ঞানটুকু রাখাতে বিশ্বাসী সে ৷ বোন ও ভায়েরা পড়াশুনা ছাড়া সাংসারিক ব্যাপারে প্রায়শ: বেখেয়াল৷
বাবা দীর্ঘ দশ বছরের সুগারের রোগী ; বয়স ৫৫ বছর ৷ এখন নতুন করে কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ মা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে থাইরয়েড সমস্যায় জর্জরিত! এখন নতুনকরে বহুগাঁট ব্যাথায় কবলিত৷
তাই, এখন বাড়ীর সদস্য হিসাবে ক্লিনিকে,চেম্বারে, ল্যাবে প্রভৃতি জায়গায় বাবা মা এর সাথে তাকেই যেতে হয়৷ তিন বছর ধরে ডাক্তারের সঙ্গে আপোয়েন্টমেন্ট, নিয়ে যাওয়া প্রভৃতি মেডিক্যাল দিকটা তাকেই দায়িত্ব নিয়ে সামলাতে হয়৷
আর পাঁচটা লোকের মত, ডাক্তারদের মুখে শুনে এই ধারণায় উপনীত হয়েছে যে, সুগার,প্রেসার, কিডনী ফেলুওর, থাইরয়েড, আথ্রাইটিস রোগগুলি নির্মূলীকরন হয় না৷ ঔষধ সেবনে সাময়িক কিছুটা সুস্থ থাকা যায়৷
রহিমা মাঝে মাঝে উৎসুক মনে বিষন্ন হয়ে আল্লাহকে প্রশ্ন ছুঁড়ে , ” তুমি কী এই জীবনব্যাপি দূর্বিষহ ব্যাধি থেকে বাবা মা দের মুক্তি দিবে না?”
এমন অনেক রোগ আছে,যেগুলি নিয়ে অধিকাংশ লোক সংগ্রাম করে যাচ্ছে অথচ নিরোগ হয়ে সুস্থ হওয়া যাচ্ছেনা৷ ডাক্তার বাড়ছে, হাসপাতাল বাড়ছে, ক্লিনিক বাড়ছে, ঔষধ নিত্যনতুন হচ্ছে, প্রযুক্তি বাড়ছে৷ এই সুযোগে সকলেই নতুন নতুন চোখধাঁধানো ফর্মুলায় মুনাফা লুটে নিচ্ছে!
ডাক্তার তার ডিগ্রিকে বাড়িয়ে অথচ জ্ঞানপরিধির সীমাবদ্ধতা (বিষয়ভিত্তিক) এর চক্ষুশীতলকারী নাম নিয়ে, ঔষধকম্পানী নিত্যনতুন ফর্মুলার ঔষধ নিয়ে, ডায়াগনষ্টিক ল্যাবগুলির নতুন টেকনোলজির যন্ত্রাদি নিয়ে, ঔষধদোকানগুলি ডাক্তার বসিয়ে রোগীর ভিড় বসিয়ে — যে যেমনভাবে পারে ; মানুষকে ডিজিট্যাল কায়দায় সম্মোহিত করছে আর পকেট থেকে লুট করছে!!
রহিমা হতাশ হয়ে শেষ চেষ্টা হিসাবে দক্ষিণ ভারতে বাবা মা কে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবল৷ গেল ও সে৷ ভেবেছিল বাবা মা এর অসুখগুলি সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলবেন ওখানকার বিখ্যাত ডাক্তারে রা! কীন্তূ সেই একই রকম কথা শুনে ফিরে এল৷ এই রোগগুলি জীবনের মত নির্মূল হয় না; তবে ঔষধসেবনে সুস্থ থাকবে৷ মনে মনে ভাবে, সুস্থ থাকে তবে কিছুদিন! তারপর যা অসুস্থ হয় সেটা আরো বেশী৷ সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার জন্য কত ডাক্তারই না দেখালাম!! ঐ বড় বড় ডিগ্রি অথবা ডায়াবেটোলজিষ্ট ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলতে পারে না! এন্ডোক্রিনোলজিষ্ট থাইরয়েড সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলতে পারেনা, রিউমাটোলজিষ্ট গাঁটের ব্যাথা সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলতে পারেনা!
সে ধর্ম (ইসলাম) সম্পর্কে অল্প অল্প জানত৷ শেষপর্যন্ত, শেষ উপায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আর আবেদন করাকে শ্রেয় মনে করল৷ ইসলামি বই পুস্তক পড়তে লাগল৷ কোন একদিন তার বান্ধবীকে দেখল সে ছোট্ট একটা বই পড়ছে৷ বইটার নাম ” মাহাত্ম্যপূর্ণ কালোন্জি তেল”
মৃত্যু ব্যাতিত সকল রোগের আরোগ্য —কীভাবে??কৌতুহলী হয়ে বইটা বান্ধবীর কাছে চেয়ে নিল৷
বইটার ভূমিকার কতকগুলি কথা তাকে দারুনভাবে ভাবিয়ে তুলল৷ মুসলিম, ইবনে মাজাহ, প্রভৃতি গ্রন্থের কতকগুলি হাদিস তার হতাশমনে আবার আশা যুগাল৷
” আল্লাহ্ প্রত্যেক রোগ ও তার সঙ্গে চিকিৎসাও পাঠিয়েছেন৷”
তাহলে, আমার বাবা মা এর মত যারা সুগার,প্রেসার,আথ্রাইটিস, থাইরয়েড, আরো বহুরোগে জীবনব্যাপী কষ্ট পাচ্ছে— তাদেরকে হাইকোয়ালিটির ডাক্তার দেখিয়েও সম্পূর্ণ সারছেনা কেন??
তাহলে কী হাদিসটা মিথ্যা ??
না না ,কখনই হাদিস মিথ্যা হবে না!
আমাবশ্যার রাতে যেমন চাঁদ উঠে না, সুঁচের ছিদ্রে ফাল ঢুকে না ; এই গুলি ভূলক্রমে হয়ে যেতেও পারে!! কিন্তূ আল্লাহর পরোক্ষবাণী হাদিস কক্ষনও মিথ্যা হবে না৷
তাহলে নিশ্চয়, চিকিৎসাব্যবস্থা,চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোথাও না কোথাও ত্রুটি আছে!!
সেই ত্রুটি অবশ্যই অধরা!! কোন গোপন রহস্যে লুকায়িত!
রহিমা তার বাবা মা এর জন্য আমার আপোয়েন্টমেন্ট নিল৷
প্রথমদিনে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল সুগার কেন হয়??
আমি বললাম, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, IDIOPATHIC,AUTOIMMUNE,GENETIC !
সে বলল, মানে?
আমি বললাম, অজানা কারণ ও নিজ ইমিউনিটি নিজের প্যাংক্রিয়াসকে আটাক করছে!
তবে, একটা কথা বলি,সেটা হল—এই অজানা কারণটা আল্লাহর ইচ্ছায় জানি ও তার নির্মূলিকরণও জানি৷ আলহামদুলিল্লাহ্ !
কারণটা কীভাবে পর্যায়ক্রমে এলার্জী,ঠান্ডা কাশি থেকে সূত্রপাত ঘটিয়ে বছর বছর ধরে অধিকাংশ লোকের মধ্যে এই জীবনব্যাপি রোগগুলি ঘটাচ্ছে সেটা জানতে হলে আমার নেক্স্ট সিরিজ বুকগুলি পড়তে হবে!! অথবা, আমার লিখালিখিগুলি ফলো করতে হবে৷
কারণটা এখনই এক কথায় বললে আপনি হাসাহাসি করবেন বা বিশ্বাস করতে পারবেন না!
তবে, আপনার বাবা মা এর চিকিৎসা শুরু হলে কয়েকমাসে সম্পূর্ণ নির্মূলীকরণের চিকিৎসাতে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশল্লাহ৷
রহিমার মত পাঠকও হয়ত ভাবছেন, ” কেন আমি অসুস্থ” ৷