#পিতা-#মাতার সাথে #সদ্ব্যবহার (আপনার কচিকাচাদের শিক্ষা দিন)
মহান আল্লাহ আব্বা আম্মার সম্পর্কে কুরআনে বলেছেন:
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا (23) وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا (24)
অর্থ: (তোমার রব্ব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি ভাল ব্যবহার করবে; তাদের মধ্যে একজন কিংবা দু’জনে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে পৌঁছে গেলে তাদের (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উ:’ বলো না এবং তাদের ধমক দিওনা; বরং তাদের সাথে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো।) [সূরা ইসরা/২৩-২৪]
পিতা-মাতা এ জগতের অমূল্য রত্ন। তারা বড় কষ্ট সহ্য করে আমাদের লালন-পালন করেন, আহারের ব্যবস্থা করেন, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন, পরিধানের ব্যবস্থা করেন, ভাল-মন্দের পার্থক্য শিক্ষা দেন, পড়া-শোনার ব্যবস্থা করেন, অসুখ হলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, আমরা কষ্টে থাকলে তাঁরা কষ্ট পান আর আমরা সুখে থাকলে তারা আনন্দ পান।
এ কারণে মহান আল্লাহ আমাদের উপর ফরয করেছেন, যেন আমরা পিতা-মাতার সাথে সুন্দর আচরণ করি এবং তাদের কোনো অবস্থাতে কষ্ট না দেই। আর তারা বৃদ্ধ হয়ে গেলে যেন আমরা তাদের আরোও বেশী বেশী যত্ন নেই।
আব্বা-আম্মার সাথে সুন্দর ব্যবহারের কিছু দৃষ্টান্ত:
১- প্রত্যেক বৈধ কাজে পিতা-মাতার আদেশ মান্য করা।
২-তাদের কোনো আদেশে নিষেধে রাগান্বিত হয়ে তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করা।
৩-তাদের কোনো আদেশ নিষেধে এমন না বলা যে, ‘উ:’ ‘কি ঝামেলা!’ ‘কত কষ্টকর’!
৪-কথা-বার্তায় তাদের সম্মান বজায় রাখা। তাদের কথার উপর কথা না বলা, উচ্চ-বাচ্য না করা এবং তাদের কথার মাঝে কথা বলে তাদের আলাপ নষ্ট না করা।
৫-চলা-ফেরা এবং উঠা বসাতেও তাদের সম্মান দেওয়া। যেমন রাস্তা চলার সময় তাদের আগে না চলা। কোথাও বসার সময় তাদের পূর্বে না বসা। অনুরূপ অফিস-আদালতে, গাড়িতে, ট্রেনে কিংবা অন্য স্থানে তাদের জন্য আগেভাগে বসার ব্যবস্থা করা।
৬-ছোট বড় কাজ কর্মে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
৭-তাদের ঘরে বাইরে সালাম দেওয়া।
৮-পারতপক্ষে তাদের ছেড়ে দূরে না যাওয়া বরং তাদের সাথেই থাকা।
৯-তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা এবং তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
১০-তাদের প্রয়োজনীয়তা ও সুখ-শান্তিকে নিজ ও নিজ সন্তান-সন্ততির প্রতি প্রধান্য দেওয়া এবং সাধ্যমত তাদের প্রয়োজন পূরণে ব্যায় করা।
১১-জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সুপরামর্শ গ্রহণ করা।
১২-তাদের অনুমতি ছাড়া কোথাও সফর না করা।
১৩-বিশেষ কারণে বাইরে অবস্থান করলে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া এবং তাদের প্রয়োজন পূরণ করা।
১৪-অন্যের পিতা-মাতাকে গালি না দেওয়া; কারণ অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দিলে সেও তোমার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে।
১৫-জীবিত থাকাবস্থায় এবং মৃত্যুর পর তাদের জন্য এ বলে দুআ করা: (হে আমার রব্ব তুমি আমার পিতা-মাতার উপর দয়া করো যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় মায়া করে লালন-পালন করেছিল)।
১৬-তাদের মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গী-সাথী এবং তাদের আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করা।
মনে রাখা উচিৎ, আমরা পিতা-মাতার জন্য যা কিছুই করি না কেন তা কিন্তু অল্প। তাদের যত সেবাই করি না কেন, ছোট বেলা তারা আমাদের জন্য যা করেছেন তার তুলনায় আমাদের সেবা তুচ্ছ।
অনুশীলন:
১-শব্দার্থ লেখ:
সদ্দ্যবহার, জীবদ্দশা, বার্ধক্য, অমূল্য রত্ন, পারতপক্ষে, গোপনীয়তা, সুপরামর্শ।
২-এক কথায় উত্তর দাও।
ক-এ জগতের অমূল্য রত্ন কি?
খ-হারাম কিংবা অবৈধকাজে পিতা-মাতার আদেশ মানা যাবে কি?
গ-তাদের আদেশ নিষেধে (উ: কি ঝামেলা!) বলা যাবে কি?
ঘ-অন্যের পিতা-মাতাকে গালি দিলে কি হয়?
ঙ-তাদের জন্য আমাদের কি বলে দুআ করতে হবে?
চ-পিতা-মাতাকে সালাম দিতে হবে কি?
৩-একাধিক বাক্যে উত্তর দাও।
ক-পিতা-মাতা আমাদের জন্য কি কি করেন?
খ-আমরা কথাবার্তায় কি ভাবে তাদের সম্মান বজায় রাখবো?
গ-তাদের ঘরের বাইরে নিয়ে গেলে আমাদের কি কি করা উচিৎ?
৪-উপরে বর্ণিত আয়াতে মহান আল্লাহ পাঁচটি আদেশ দিয়েছেন। আয়াত থেকে সে আদেশগুলি বের করে পরষ্পর সাজিয়ে লিখ।
ক- খ-
গ- ঘ-
ঙ-
৫-কুরআনের আয়াতটি অর্থ সহ মুখস্ত করো।