আধুনিক মিডিয়ায় দ্বীনের প্রচারঃ
বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে, কম কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ধর্মবিদ্বেষীরা এসব প্রযুক্তিকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। তারা তাদের ওয়েবসাইট, ফেইসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। আমরা এখনও দাওয়াতি কজে মসজিদের মিম্বর, বইপুস্তক, ওয়াজ মাহফিল ও তালিমি জলশার মধ্যে সীমাবদ্ধ। পত্রপত্রিকার মতো আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ায় আমরা এখনও পুরোদমে এগিয়ে আসতে পারিনি।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নবী-রাসুলরা তাদের যুগে তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মহান আল্লাহর বিধান মানুষের কাছে প্রচার করেছেন। মুসা (আ.) এর যুগে জাদুর প্রভাব ছিল অধিক। মুসা (আ.) সে যুগের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর দেওয়া মুজেজা ব্যবহার করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে অসংখ্য জাদুকর আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। ঈসা (আ.) এর সময়ে চিকিৎসা বিদ্যার ব্যবহার ছিল বেশি। তাই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসা বিদ্যার ব্যবহারের মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত দিয়েছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সময়ে সাহিত্যের প্রভাব ছিল খুব বেশি। তাই তিনি আরবি সাহিত্য ব্যবহার করে আল্লাহর সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
সব নবী-রাসুল মানবজাতির কাছে গিয়ে মহান প্রভুর পরিচয় তুলে ধরে ইসলামের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করাই ছিল নবী-রাসুলদের কাজ। সব নবীই তার উম্মতকে তাওহিদ ও ইবাদতের আদেশ করেছেন এবং শিরক ও বিভিন্ন পাপকর্ম থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীরÑ যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইনজিলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদের সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন।’ (সূরা আরাফ : ১৫৭)।
দ্বীনি দাওয়াতের পদ্ধতি একদিকে যুগোপযোগী উন্নতমানের হওয়া দরকার, অন্যদিকে সমকালীন বাতিল শক্তির মোকাবিলা করার মতো যোগ্যতা, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা জরুরি।
আধুনিক মিডিয়াকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। ১. প্রিন্ট মিডিয়া, ২. অডিও মিডিয়া, ৩. ভিডিও মিডিয়া, ৪. কম্পিউটার মিডিয়া। আধুনিক বিশ্বে দ্বীনি দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম ওয়েবসাইট, ওয়েব পোর্টাল, অনলাইন ফ্রি বই প্রকাশ করে, স্ক্যানিং কপি আপলোড করা এবং বিজ্ঞাপনে ইসলামি ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে। তাছাড়া রয়েছে ব্লগ, যা দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম, আরেকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। বর্তমান সময়ে ইসলামের সুমহান বাণী লিখে দ্বীনি দাওয়াতের ব্যাপক ভূমিকা পালন করা যায় এ ব্লগের মাধ্যমে। আরও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। ফেইসবুকে ইসলামের বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াতের সওয়াব হাসিল করা যায়। দ্বীনি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ আরও একটি মাধ্যম হলো ইউটিউব বা এর নিজস্ব চ্যালেন তৈরি, যার মাধ্যমে জুমার খুতবা, ইসলামি বিভিন্ন স্থানের দৃশ্য, নিজের কিছু ধর্মীয় আলোচনা মানুষের কাছে দেখার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তির দুনিয়ায় আরও রয়েছে টেলিভিশন ও রেডিও, যার দ্বারা ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। অনলাইন পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইসলামি কলাম লিখে সমাজ পরিবর্তন ও সমাজে ভালো কিছু প্রচলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করা যায়।
বর্তমানে কোরআন ও হাদিস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যার, যা কোনো বিষয় সম্পর্কে জানা সহজ করে দিয়েছে। এ সফটওয়্যারগুলো প্রচারের মাধ্যমেও দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে হাতের মুঠোয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে অ্যান্ড্র্রয়েড মোবাইল ফোন। এ মোবাইল ফোনে ইসলামবিষয়ক অ্যাপগুলো, বিভিন্ন অনুবাদ, মাসালাসহ বিভিন্ন তথ্য রেখে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে দ্বীনি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করা যায়। ইসলামি দাওয়াত প্রদান করা তথা সৎকাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা সব মুসলমানের ওপর অবশ্য কর্তব্য। উম্মতে মুহাম্মাদির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব পালন। এ দ্বীনি দাওয়াত যে ব্যক্তি পালন করবে, সে সফলতা অর্জন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দকাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)।